দেবীদ্বার উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ২৩৮.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°০৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মুরাদনগর উপজেলা, দক্ষিণে চান্দিনা উপজেলা, পূর্বে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে মুরাদনগর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৭৮৪০১; পুরুষ ১৯০৯২৬, মহিলা ১৮৭৪৭৫। মুসলিম ৩৫৬২৫৭, হিন্দু ২২০৯৪, বৌদ্ধ ১১, খ্রিস্টান ২০ এবং অন্যান্য ১৯।

জলাশয় প্রধান নদী: গোমতী; ভিংলাবাড়ি খাল, কার্জন খাল এবং হাছন রাজার দিঘি, দেও দিঘি, পান দিঘি, ধামতীপাল দিঘি, জ্যোৎস্না জলমহাল ও ভিরাল্লা জলমহাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন দেবীদ্বার থানা গঠিত হয় ১৯১৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
তথ্যঃ

কুমিল্লা জেলা – দেবীদ্বার উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বায়তুল আজগর জামে মসজিদ (গুনাইঘর), অষ্টভুজাকৃতির শিব মন্দির (ধামতি বাজার)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে পাকবাহিনীর সঙ্গে বাঙালিদের এক সংঘর্ষে ৩৩ জন বাঙালি শহীদ হন। তাছাড়া পাকবাহিনী ৭ আগস্ট চরকামতায়, ২৯ সেপ্টেম্বর জাকেরগঞ্জ এলাকায় এবং ১৪ নভেম্বর থানা সদরের নিকট গণহত্যা চালিয়ে বহু সংখ্যক নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (মুক্তিযোদ্ধা চত্তর)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৩৯%; পুরুষ ৫৪.৫১%, মহিলা ৪৬.২৮%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭, কারিগরি বিদ্যালয় ৩, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: দেবীদ্বার রেয়াজউদ্দীন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গঙ্গামন্ডল রাজ ইনস্টিটিউশন (১৯২২), ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯২০)।
পত্র-পত্রিকা সাপ্তাহিক: দেবীদ্বার’ ও ‘কুমিল্লা কণ্ঠ’।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৫৭, নাট্যদল ১, প্রেসক্লাব ১।
বিনোদন কেন্দ্র দেবীদ্বার পৌর পার্ক ও দেবীদ্বার পৌর শিশুপার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.১৭%, অকৃষি শ্রমিক ১.৭৪%, শিল্প ১.০২%, ব্যবসা ১৪.০৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৭%, চাকরি ১১.৮২%, নির্মাণ ১.২২%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৯০% এবং অন্যান্য ৮.১৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৪.৬১%, ভূমিহীন ২৫.৩৯%। শহরে ৬০.২০% এবং গ্রামে ৭৫.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, ভূট্টা, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, পাট, কাউন, তিল, চিনাবাদাম, মাসকলাই, মসুর, ছোলা।
প্রধান ফল-ফলাদি পেয়ারা, লিচু।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০.৪০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৯৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ২১১.০৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা পাটকল, হিমাগার, বরফকল, ইটভাটা।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বুননশিল্প (জাল), বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫। দীঘিরপাড় ও রসুলপুর হাট এবং পোনরার পৌষসংক্রান্তি ও বৈশাখি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আলু, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৮.৫৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.১৭%, ট্যাপ ০.৭৬%, পুকুর ১.১৩% এবং অন্যান্য ৩.২৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৬.৩৫% (গ্রামে ৬৫.৫৭% ও শহরে ৮৬.৬৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২১.৩৬% (গ্রামে ২১.৭৪% ও শহরে ১১.৭৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.২৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, সিএমএইচ ইউনিট ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার প্রায় শতাধিক লোকের মৃত্যু এবং বেশসংখ্যক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। তাছাড়া ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালে গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবনের ফলে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

আরও দেখুনঃ
