কুমিল্লায় বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র – মাসের বেতনের টাকা তুলে গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে রিকশায় চড়ে শহরের রানীর দীঘির পাড় এলাকা দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন কুমিল্লা ইপিজেডের একটি কোম্পানির কর্মকর্তা আজাদ হোসেন। রাত ১০টার দিকে ওই এলাকায় তিনজন ছিনতাইকারী এসে রিকশার গতিরোধ করে। এদের মধ্যে দুজন দেশীয় অস্ত্র এবং একজন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার কাছে থাকা ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আজাদ হোসেনের ভাষ্য, এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তার জীবনে আর হয়নি। প্রাণভয়ে মাসিক বেতনের পুরো টাকাটাই তিনি তুলে দেন ছিনতাইকারীদের হাতে।

 

কুমিল্লায় বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

শুধু আজাদ হোসেনই নন, কুমিল্লায় প্রায় এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে পথচারী ও সাধারণ মানুষকে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা শহরজুড়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দিনে কিংবা রাতে, প্রকাশ্যে কিংবা কিছুটা নিরিবিলি এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা।

আর ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন বেশির ভাগ সময়ই থানা-পুলিশে অভিযোগ করেন না। করলেও মালামাল ফেরত পাওয়ার নজিরও খুব একটা নেই। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, ইদানীং সময়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই বেড়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হলের সামনে, লিবার্টি মোড়, পূবালী চত্বর, রানীর দীঘির পাড়, মহিলা কলেজ রোড, চকবাজার শাপলা মার্কেট, তেলিকোনা চৌমুহনী, গোবিন্দ পুকুর পাড়, দক্ষিণ চর্থা, রানীর বাজার, ঠাকুরপাড়া, ছোটরা, রেসকোর্স ধানমন্ডি সড়ক এলাকা, টমসনব্রিজ থেকে বাখরাবাদ সড়কের কয়েকটি এলাকা, কালিয়াজুড়ি পাক্কার মাথা, সংরাইশ কালীবাড়ি মোড়, টিক্কারচর, তালপুকুর পাড়, শাসনগাছা ও আশপাশের এলাকার অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা।

প্রতিদিনই এসব স্থানে কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিনতাইকারীই টাউন হল ও আশপাশের এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকে। সুযোগ পেলেই অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।

ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন বলছেন, বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার পর অস্ত্রের মুখে তাদের কিছু বলার উপক্রম থাকে না। আর কোনো কিছু দিতে না চাইলে তারা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তাই নিরুপায় হয়ে সবকিছু দিয়ে দিতে হয়।

ছিনতাইকারীদের বড় একটি অংশ কান্দিরপাড়, টাউন হল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। প্রায় এ চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে শহরে ঘোরাফেরা করে। কেউ কিছু বললে তেড়ে এসে মারধর করার ঘটনাও ঘটে। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে পূবালী চত্বর এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় থেকে অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে ধোলাই দেন জনতা। এর কয়েক দিন আগে কান্দিরপাড় এলাকায় এক নারী পথচারীর ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে মারধরের শিকার হয় এক ছিনতাইকারী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এর আগে গত ডিসেম্বরে কান্দিরপাড় এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মোবাইল ফোন হারিয়েছেন ইমরান হোসেন সোহান নামে নাঙ্গলকোটের এক সাংবাদিক। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানালেও তার ফোনটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ইমরান হোসেন বলেন, ‘নাঙ্গলকোট থেকে আমার স্ত্রীকে নিয়ে শহরে নেমে কান্দিরপাড়ের একটি বেকারিতে কিছু কেনার জন্য প্রবেশ করি। বের হওয়ার পরই সবার সামনে কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। থানায় অভিযোগ করলেও মোবাইল ফোনটি আর ফিরে পাইনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব মিলিয়ে গত দুই মাসে কুমিল্লা শহরে কয়েক শ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব ঘটনার বেশির ভাগই থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশ বলছে, অভিযোগ না পেলেও ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ্বাস বলেন, ‘কিছুদিন ধরে কুমিল্লা শহরে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়েছে। এদের সঙ্গে সব সময় ছোটখাটো অস্ত্র থাকে। কেউ ধরতে গেলেই আহত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এসব ছিনতাইকারী বেশির ভাগ সময়ই নেশাগ্রস্ত থাকে।

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এরা বেশ উগ্র থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সে অভিযানের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিনই তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খান বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট আছে। এ জন্য পুলিশের টহল এবং প্যাট্রল টিম বাড়ানো হয়েছে।

শহরের মধ্যে যেন সাধারণ জনগণ ছিনতাইয়ের কবলে না পড়েন, এ জন্য থানা, ফাঁড়ি এবং ডিবি পুলিশের টিমও কাজ করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। তার পরও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ছিনতাই করে, তাদের কাছে ছোটখাটো অস্ত্র থাকতে পারে। এ ধরনের কোনো ঘটনার তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

 

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment