ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আয়তন: ১২৮.৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৫´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৩´ থেকে ৯১°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কসবা ও মুরাদনগর উপজেলা, দক্ষিণে বুড়িচং উপজেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও কসবা উপজেলা, পশ্চিমে দেবীদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৮১৪৭৭; পুরুষ ৯১৮৮০, মহিলা ৮৯৫৯৭। মুসলিম ১৭৬৪৬৮, হিন্দু ৪৯৯৫ এবং অন্যান্য ১৪।

জলাশয় প্রধান নদী: গোমতী, বুড়ি, সালদা, ঘূংঘুর। বড়খাল এবং পল্লার বিল, মকিমপুর গো-বাক বিল, জামতলীর বাবনী বিল ও ষাইটশালার বেড়ী বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ব্রাহ্মণপাড়া পূর্বে কসবা থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং ১৯৫৪ সালে এটি বুড়িচং থানার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৮ সালে ব্রাহ্মণপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্রাহ্মণপাড়া থানা গঠিত হয় ১৯৭৬ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
তথ্যঃ

কুমিল্লা জেলা – ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শশীদল রেলস্টেশনের পশ্চিমে পাঁচপীরের মাযার (১৮১৫), চান্দলা শিব মন্দির (আঠার শতক), হরিমঙ্গলের বিখ্যাত মঠ ও তীর্থস্থান, করিম শাহ’র মাযার।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৭ মার্চ শশীদল ইপিআর ক্যাম্প থেকে বাঙালি ইপিআরদের সহযোগিতায় সাধারণ জনতা ৪ জন পাকিস্তানি ইপিআরকে পিটিয়ে হত্যা করে। জুনের শেষদিকে উপজেলার ছকারমার পুলের নিকট পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের এক সম্মুখ লড়াইয়ে ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। কসবা ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্তের ঘূংঘুর নদীর তীরে হোলাইমুড়ি নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।
পরবর্তীতে পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী চান্দলা ও ষাইটশালা গ্রামে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে গণকবর দেয়। তাছাড়া উপজেলার চান্দলা, বড় ভাঙানিয়া (জিরুল), সাহেবাবাদ বাজারের উত্তরপাশের টাটেরা, সিদলাই, লাল্লা, মালাপাড়া, শশীদলের দেউস, মুকিমপুর কালামুড়িয়া ব্রিজ, মিরপুর, মাধবপুর, দক্ষিণ তেতাভূমি প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একাধিক লড়াই হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (রেললাইন সংলগ্ন হরিমঙ্গল পুকুর পাড়); বধ্যভূমি ২ (উত্তর চান্দলা ভুঞা বাড়ি, দক্ষিণ চান্দলা প্রবোধ কুমার দাসের বাড়ি)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৫৫, মন্দির ১২, মাযার ৪, তীর্থস্থান ৫, মঠ ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রামনগর যুগল মঠ (১৭০৫), ষাইটশালা জামে মসজিদ (১৭১৯), চান্দলা শিব মন্দির (১৮০০), ষাইটশালা রামমোহন মন্দির (১৮০৫), শশীদল পাঁচপীরের মাযার (১৮১৫), হরিমঙ্গলের মঠ ও তীর্থস্থান (১৮২২), বাঘাই শাহ মসজিদ ও মাযার (১৯১০)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৩৬%; পুরুষ ৫১.৭৪%, মহিলা ৪২.৯৭%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০২, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজ (১৯৭০), শশীদল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), মাধবপুর শেখলাল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), মাধবপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), চান্দলা কেবি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), ব্রাহ্মণপাড়া ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী পাক্ষিক: ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং (নিয়মিত); মাসিক: কৃতি ব্রাহ্মণপাড়া বুড়িচং (অনিয়মিত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩, রিপোটার্স ইউনিটি ১, সংগীত একাডেমি ১, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ১.৪৫%, শিল্প ০.৪৬%, ব্যবসা ১৩.৯৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৬৪%, চাকরি ১১%, নির্মাণ ০.৮৩%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৯% এবং অন্যান্য ৫.৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৮.৭৫%, ভূমিহীন ২১.২৫%। শহরে ৭৪.৫৪% এবং গ্রামে ৭৮.৮৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, আলু, পান, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনাবাদাম, কাউন, আখ, অড়হর, তিসি, গাজর, শালগম, ডাল।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, কামরাঙ্গা, করমচা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩৪, হাঁস-মুরগি ২৮, হ্যাচারি ২০, নার্সারি ২২।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৬, কাঁচারাস্তা ২৬০; রেলপথ ৮ কিমি। রেলস্টেশন ২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইস মিল, স’মিল, তেলকল, ধানকল, আটাকল, বরফকল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, তাঁতশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫, মেলা ৭। সাহেবাবাদ হাট, দুলালপুর হাট, চান্দলা হাট, মাধবপুর হাট, মালাপাড়া হাট এবং চান্দলা মেলা, বলদার বৈশাখী মেলা, সাহেবাবাদ কালীবাড়ি মেলা, ষাইটশালার কালীসিদ্ধার মেলা, অষ্টগ্রামের পূর্ণধাম মেলা, চৈত্রমাসের অমাবস্যাতে হরিমঙ্গলের মেলা ও মকিমপুর দয়াময় মহোৎসব উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, আলু।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৪৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৭৩%, ট্যাপ ০.৩৩%, পুকুর ০.৯২% এবং অন্যান্য ৩.০২%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৫৮% (গ্রামে ৬০.০২% ও শহরে ৮৯.২৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.১৮% (গ্রামে ৩২.৭৭% ও শহরে ২.০১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.২৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩, ক্লিনিক ৯৩।

আরও দেখুনঃ

মেঘনা উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ
মুরাদনগর উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ
মনোহরগঞ্জ উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ
লাকসাম উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ
নাঙ্গলকোট উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ
–