বরুড়া উপজেলা আয়তন: ২৪১.৬৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৪´ থেকে ২৩°৩৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কুমিল্লা আদর্শ সদর ও চান্দিনা উপজেলা, দক্ষিণে লাকসাম ও শাহরাস্তি উপজেলা, পূর্বে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লাকসাম উপজেলা, পশ্চিমে চান্দিনা ও কচুয়া (চাঁদপুর) উপজেলা। উপজেলার পূর্বাংশে রয়েছে লালমাই পাহাড়ের অংশবিশেষ।
জনসংখ্যা ৩৫১০৮৬; পুরুষ ১৭৪২৪২, মহিলা ১৭৬৮৪৪। মুসলিম ৩২৩৮০৭, হিন্দু ২৬৮০৩, বৌদ্ধ ১৮, খ্রিস্টান ৪০৩ এবং অন্যান্য ৫৫।

জলাশয় কার্জন খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বরুড়া থানা গঠিত হয় ১৯৪৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৯৫ সালে এটিকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়।
তথ্যঃ


কুমিল্লা জেলা – বরুড়া উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আদিনামুড়ার মসজিদ ও মাযার, চন্ডীমাতার মন্দির (চন্ডীমুড়ার বাজার সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত), মইর দীঘি (বাঁশপুর গ্রাম)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। একইদিন তারা গ্রামে প্রবেশ করে ৬ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। ১০ সেপ্টেম্বর পয়ালগাছার বটতলীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত লড়াইয়ে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (বটতলীর অদূরে নারায়ণপুরে)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫১২, মন্দির ১০০, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বরুড়া জামে মসজিদ,গালিমপুর মসজিদ, আদিনামুড়া মসজিদ, মহেশপুরে আব্দুল হামিদ শাহের (র.) মাযার, বরুড়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান, চন্ডীমাতার মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.৯২%; পুরুষ ৪৭.৩৫%, মহিলা ৪২.৬০%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৬, কারিগরি কলেজ ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪৯, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পয়ালগাছা পোস্ট-গ্রাজুয়েট কলেজ, বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ (১৯৭২), গালিমপুর টিসি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), জয়নগর সিডিউল্ড কাস্ট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), বাতাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), তলাগ্রাম তচলাহা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৭), পাঁচথুবি আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৮৬০), বাতাইছড়ি দাখিল মাদ্রাসা (১৯১১), খলারপাড় ওয়াজেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১), রাজামারা ছুন্নিয়া মাদ্রাসা (১৯৪৪), বরুড়া আলিয়া মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: টেলিফোন, বরুড়া কণ্ঠ; অবলুপ্ত : আবাহন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৩১, নাট্যদল ১, কমিউনিটি সেন্টার ১২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.০৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৬%, ব্যবসা ১১.২১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৮%, চাকরি ৮.৯০%, নির্মাণ ১.৩৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৭.১৭% এবং অন্যান্য ৯.২১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৪৪%, ভূমিহীন ৩৩.৫৬%। শহরে ৬১.৬২% এবং গ্রামে ৬৭.০৭% পরিবারের কৃষিজমি আছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, সরিষা, তিল, পান, পাট, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কুল, তরমুজ, তাল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৫, কিমি, কাঁচারাস্তা ২০৫ কিমি; রেলপথ ১ কিমি; হ্যালিপ্যাড ১, ব্রিজ ও কালভার্ট ৮৫০।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, আইসমিল, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, রেশমশিল্প, পাটশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪২, মেলা ৭। বরুড়া হাট, রামমোহন হাট, ঝলম হাট, ফকির হাট, খোশবাস হাট, মহেশপুর হাট, আদ্রা হাট, হরিপুর হাট, চন্ডীমুড়া হাট, আমড়াতলী হাট, পয়ালগাছা হাট, আগানগর হাট এবং চন্ডীমুড়া মেলা, সাহাপুর মেলা, লক্ষ্মীপুর মেলা, রামমোহন মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পান, ধান, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পত্মিদ্দবিদুঞ্ঝতায়ন কমট্টসূচির আওতাধীন। তএব ৩৩.৭৭% পরিবাএরর বিদুঞ্ঝৎ বঞ্ঝবহাএরর সুএযাগ রএয়এছ।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৭৯%, ট্যাপ ০.৭১%, পুকুর ০.৫৪% এবং অন্যান্য ৪.৯৭%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.২৪% (গ্রামে ৬২.৯০% ও শহরে ৫৭.১৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন এবং ২৩.৩৩% (গ্রামে ২২.৯১% ও শহরে ২৬.৫৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৪.৪৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৫, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা উপকেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৯, দাতব্য চিকিৎসালয় ৫, ক্লিনিক ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৪ সালের জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার প্রাণহানির ঘটনাসহ ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

আরও দেখুনঃ

মেঘনা উপজেলা | কুমিল্লা জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ